ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা | ডায়াবেটিসে কী খাবেন ও কী খাবেন না

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই আর্টিকেলে আমরা জানব—ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কীভাবে একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা তৈরি করা যায়, কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত এবং কোনগুলো পরিহার করা প্রয়োজন। অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা | ডায়াবেটিসে কী খাবেন ও কী খাবেন না।

ডায়াবেটিস-রোগীর-খাদ্য-তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আদর্শ খাদ্য তালিকা জেনে নিন। কোন খাবার ডায়াবেটিসে উপকারী, কোনটি ক্ষতিকর—সহজ ভাষায় বিস্তারিত গাইড ও দৈনিক ডায়েট চার্ট।

ডায়াবেটিসে কী খাবেন ও কী খাবেন না – সম্পূর্ণ খাদ্য গাইড

ডায়াবেটিস কী এবং কেন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি

ডায়াবেটিস মূলত দুটি ধরণের হতে পারে:

টাইপ ১ ডায়াবেটিস: যেখানে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস: যেখানে ইনসুলিন থাকলেও শরীর সেটির প্রতি সাড়া দেয় না।

ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস মেলিটাস হলো এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী বিপাকজনিত রোগ, যেখানে শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না বা উৎপাদিত ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়, তখন গ্লুকোজ রক্তে জমা হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন চোখ, কিডনি, স্নায়ু ও হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা। কারণ, আমরা যা খাই তার মাধ্যমেই শরীরে শর্করা তৈরি হয়। অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যায়, যা জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, নির্ধারিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং শক্তি ও পুষ্টি বজায় থাকে। তাই প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ শুধু প্রয়োজন নয়, বরং চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল চাবিকাঠি হলো সঠিক ও নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস। একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কী খাওয়া হচ্ছে তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কখন এবং কতটা খাওয়া হচ্ছে সেটিও সমানভাবে জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং হঠাৎ রক্তে শর্করার ওঠানামা প্রতিরোধ করে।

একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনন্দিন খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন ও জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকা উচিত, যাতে শরীর ধীরে ধীরে শক্তি পায় এবং অতিরিক্ত শর্করা জমে না। এছাড়া ছোট ছোট বিরতিতে অল্প অল্প করে খাওয়া, তেলে ভাজা ও চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করা এবং বেশি করে পানি পান করা—এই অভ্যাসগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত সময় মেনে খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মনোযোগ দিলে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা কমে আসে।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য প্রধান খাবার নির্বাচন গাইড

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা তৈরি করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক খাবার নির্বাচন। কারণ আমরা যা খাই, তার প্রভাব সরাসরি রক্তে শর্করার মাত্রায় পড়ে। তাই খাবার বেছে নেওয়ার সময় শুধু পেট ভরানো নয়, বরং পুষ্টি, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI), ও ফাইবারের পরিমাণের দিকেও নজর দিতে হবে। নিচে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য প্রধান খাবার বাছাইয়ের গাইড দেওয়া হলো ঃ

১. কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate)

কার্বোহাইড্রেট শক্তির প্রধান উৎস, কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তে শর্করা দ্রুত বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত জটিল কার্বোহাইড্রেট (Complex Carbohydrate) বেছে নেওয়া, যা ধীরে হজম হয় এবং গ্লুকোজ ধীরে রক্তে ছাড়ে।
যা খেতে পারেন:
  • ব্রাউন রাইস বা লাল চাল
  • ওটস, ডালিয়া, লাল আটার রুটি
  • ডাল, মুসুর, ছোলা
  • শাকসবজি ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার

    যা এড়িয়ে চলবেন:
    • সাদা চাল
    • মিষ্টি, কেক, বিস্কুট
    • সফট ড্রিংকস বা জুস
    • আলু, পাউরুটি, চিনি

      ২. প্রোটিন (Protein)

      প্রোটিন শরীরের কোষ মেরামত করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা থাকে না, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
      ভালো প্রোটিন উৎস:
      • মাছ (রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, ইলিশের বদলে কম তেলযুক্ত মাছ)।
      • মুরগির বুকের মাংস (চামড়াহীন)।
      • ডিমের সাদা অংশ।
      • মুগডাল, ছোলা, সয়াবিন।
      • লো-ফ্যাট দুধ ও দই।

        এড়িয়ে চলবেন:
        • চর্বিযুক্ত গরু বা খাসির মাংস।
        • প্রক্রিয়াজাত মাংস(সসেজ, সালামি ইত্যাদি)।

          ৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি বা ফ্যাট (Healthy Fat)

          সব ফ্যাট খারাপ নয়। কিছু ফ্যাট শরীরের জন্য উপকারী, কারণ এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
          উপকারী ফ্যাটের উৎস:
          • অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল (পরিমাণমতো)
          • বাদাম, কাজু, আখরোট
          • মাছের তেল বা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
          • অ্যাভোকাডো

            ক্ষতিকর ফ্যাট:
            • ঘি, মাখন, বনস্পতি তেল
            • ডিপ ফ্রাইড বা তেলে ভাজা খাবার
            • ৪. ফাইবার ও সবজি (Fiber and Vegetables)
            ফাইবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি হজমে সাহায্য করে ও গ্লুকোজ শোষণ ধীর করে।
            উপকারী সবজি:

            • করলা, লাউ, পুঁইশাক, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া
            • গাজর, টমেটো, শসা, পালংশাক
            • পাতা জাতীয় শাকসবজি
            • ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার শুধু শর্করা নয়, কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন হ্রাসে সাহায্য করে।

              ৫. সম্পূর্ণ শস্য ও ডাল (Whole Grain and Pulses)

              সম্পূর্ণ শস্যজাত খাবারে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বেশি থাকে। এগুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে।
              যা খেতে পারেন:
              • লাল চাল, ওটস, বার্লি
              • ছোলা, মুগডাল, মসুরডাল
              • রাজমা, লেন্স ডাল

              ডায়াবেটিস-রোগীর-খাদ্য-তালিকা

              ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ দৈনিক খাদ্য তালিকা

              ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সঠিক খাবার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি খাবার গ্রহণের সময় ও পরিমাণও সমান জরুরি। সারাদিনে অল্প অল্প করে নির্দিষ্ট বিরতিতে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। নিচে সকালে, দুপুরে ও রাতে কীভাবে খাবার সাজানো যেতে পারে তার একটি আদর্শ উদাহরণ দেওয়া হলোঃ

              সকালের নাশতা (Breakfast)ঃ

              সকালের খাবার শরীরের শক্তি জোগায় এবং দিনের শুরুতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

              খেতে পারেন:

              • ১ কাপ চিনি ছাড়া গ্রিন টি বা হারবাল চা।
              • ২ টুকরো লাল আটার রুটি / ওটস / ডালিয়া।
              • ১টা সেদ্ধ ডিম বা ১ বাটি মুসুর ডাল।
              • ১টা ছোট আপেল বা পেয়ারা।
                 টিপস: সকালের খাবারে প্রোটিন ও ফাইবার বেশি রাখলে সারাদিন ক্ষুধা কম লাগে এবং ব্লাড সুগার ওঠানামা কম হয়।

                দুপুরের খাবার (Lunch)ঃ

                দুপুরের খাবার ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে-যাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার সবই সঠিক অনুপাতে থাকে।

                খেতে পারেন:

                • ১ কাপ ব্রাউন রাইস বা লাল চাল।
                • ১ টুকরো মাছ বা মুরগির বুকের মাংস (সিদ্ধ বা গ্রিল করা)।
                • প্রচুর শাকসবজি (লাউ, করলা, বরবটি, পুঁই, পালংশাক)।
                • ১ বাটি মুগ বা মুসুর ডাল।
                • ১ গ্লাস লেবু পানি (চিনি ছাড়া)।
                  টিপস: ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে সিদ্ধ, ঝোল বা স্টিমড আইটেম বেছে নিন। এতে ফ্যাট কমবে ও শর্করা বাড়বে না।

                  বিকেলের নাস্তা (Evening Snack)ঃ

                  বিকেলে হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার দরকার যাতে সন্ধ্যার পর রক্তে শর্করা কমে না যায়।

                  খেতে পারেন:

                  • ১টা ছোট আপেল, পেয়ারা বা কমলা।
                  • ১ মুঠো বাদাম, আখরোট বা চানা।
                  • ১ কাপ গ্রিন টি বা দারচিনি চা।
                    টিপস: প্যাকেটজাত বিস্কুট, চিপস বা সফট ড্রিংক সম্পূর্ণ পরিহার করুন।

                    রাতের খাবার (Dinner)ঃ

                    রাতের খাবার হালকা হওয়া উচিত, যেন হজম সহজ হয় এবং রাতে রক্তে শর্করা না বেড়ে যায়।

                    খেতে পারেন:

                    • ২ টুকরো লাল আটার রুটি।
                    • ১ বাটি মুগডাল / সবজি ঝোল।
                    • ১ গ্লাস লো-ফ্যাট দুধ (চিনি ছাড়া)।
                    • চাইলে ১/৪টা পেঁপে বা শসা সালাদ।
                     টিপস: রাতের খাবার ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া ভালো। এতে হজম সহজ হয় ও ব্লাড সুগার ব্যালান্স থাকে।

                    পানীয় ও পানি গ্রহণের সঠিক পদ্ধতিঃ

                    ডায়াবেটিস রোগীর দিনে ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

                    চিনি যুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে

                    • গ্রিন টি
                    • দারচিনি চা
                    • লেবু পানি (চিনি ছাড়া)
                    • খেতে পারেন।

                    ডায়াবেটিসে নিষিদ্ধ খাবার ও সতর্কতা

                    ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
                    কিন্তু অনেক সময় ভুল খাদ্যাভ্যাস, অজান্তেই খাওয়া কিছু খাবার কিংবা জীবনযাপনের অনিয়মের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। তাই নিচের খাবারগুলো থেকে সবসময় দূরে থাকা জরুরি 

                     ১. চিনি ও মিষ্টিজাত খাবার

                    • চিনি, মিষ্টি, রসগোল্লা, লাড্ডু, কেক, পেস্ট্রি বা সফট ড্রিংকের মতো খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।
                    • এসব খাবারে থাকে “রিফাইনড সুগার”, যা ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
                    বিকল্প: চিনি ছাড়া হারবাল চা, দারচিনি বা স্টেভিয়া ব্যবহার করতে পারেন।

                    ২. সাদা চাল, ময়দা ও প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটঃ

                    • সাদা চাল, পাউরুটি, পাস্তা, বিস্কুট বা পরোটা খেলে শরীরে দ্রুত গ্লুকোজ তৈরি হয়।
                    • এসব খাবারে ফাইবার কম থাকায় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়।
                    বিকল্প: ব্রাউন রাইস, লাল আটার রুটি বা ওটস বেছে নিন।

                    ৩. সফট ড্রিংক ও প্যাকেটজাত জুসঃ

                    • বাজারের সফট ড্রিংক বা ফলের জুসে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও সংরক্ষণকারী উপাদান থাকে।
                    • এসব পানীয় শরীরে ইনসুলিনের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ওজন বাড়ায়।
                    বিকল্প: চিনি ছাড়া লেবু পানি, হারবাল চা বা ডাবের পানি পান করুন।

                    ৪. ভাজাপোড়া ও ফাস্ট ফুডঃ

                    • চিপস, বার্গার, পিজ্জা বা ভাজা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ও অস্বাস্থ্যকর তেল থাকে, যা রক্তে শর্করার পাশাপাশি কোলেস্টেরলও বাড়ায়।
                    বিকল্প: স্টিম, সিদ্ধ বা গ্রিল করা খাবার খাওয়া নিরাপদ।

                    ৫. অ্যালকোহল ও ধূমপানঃ

                    • অ্যালকোহল ও ধূমপান ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
                    • এগুলো লিভারের কাজ ব্যাহত করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমায়।
                    পরামর্শ: সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন; প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

                    অতিরিক্ত সতর্কতাঃ

                    ডায়াবেটিস শুধু খাবারের রোগ নয়-এটি একটি জীবনযাপনজনিত সমস্যা। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়,যেমনঃ
                    • নিয়মিত ব্যায়াম করুন (প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন)
                    • পর্যাপ্ত ঘুম নিন (৬–৮ ঘণ্টা)
                    • মানসিক চাপ কম রাখুন
                    • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করুন
                    • নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন
                    সংক্ষেপে:
                    ডায়াবেটিস রোগীর জন্য “কি খাবেন” এর চেয়ে “কি খাবেন না” জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
                    সঠিক খাবার বেছে নেওয়া ও নিষিদ্ধ খাবার এড়িয়ে চললে রক্তে শর্করা সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং জটিলতা অনেক কমে যায়।

                    ফল ও ফলের রস: কোনগুলো নিরাপদ?

                    ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল হলো প্রাকৃতিক ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে সব ফল সমান নিরাপদ নয়। কিছু ফলে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) বেশি থাকায় রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। তাই ফল বাছাইয়ের সময় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম এমন ফল বেছে নেওয়া উচিত, যা ধীরে ধীরে গ্লুকোজ তৈরি করে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।

                    নিরাপদ ও উপকারী ফল:

                    আপেল, পেয়ারা, জাম, কমলা, মাল্টা, স্ট্রবেরি, কিউই, পেঁপে, টক জাতীয় বেরি ও কলার ছোট টুকরা (পরিমাণমতো)।
                    এই ফলগুলোতে ফাইবার বেশি থাকে, যা হজমে সহায়তা করে এবং রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়তে দেয় না।

                    যে ফলগুলো সীমিত পরিমাণে খেতে হবে:

                    আম, আনারস, লিচু, তরমুজ ও পাকা কলা। এসব ফলে প্রাকৃতিক চিনি বেশি, তাই একসঙ্গে বেশি না খাওয়াই ভালো।

                    ফলের রসের ক্ষেত্রে সতর্কতা:

                    ফলের রস (বিশেষ করে বাজারজাত প্যাকেটের) ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এতে ফাইবার কম থাকে ও চিনি বেশি থাকে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।

                    বিকল্প হিসেবে: সম্পূর্ণ ফল খাওয়া সবসময়ই রসের চেয়ে উত্তম। যদি রস খেতেই চান, তাহলে পানি মিশিয়ে সামান্য পরিমাণে তাজা ফলের রস পান করা যেতে পারে—তাও খাবারের পরপর নয়, বরং মাঝে মাঝে।

                    একদিনের উদাহরণ খাদ্য তালিকা

                    সময়              খাবারের ধরন       খাবারের উদাহরণ

                    সকাল                      নাশতা             ওটস + সেদ্ধ ডিম + গ্রিন টি

                    দুপুর              প্রধান খাবার          ব্রাউন রাইস + মাছ + সবজি + ডাল

                    বিকেল                নাস্তা                     আপেল + বাদাম + হারবাল চা

                    রাত                   হালকা খাবার              রুটি + ডাল + দুধ

                    সংক্ষেপে:

                    একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক খাদ্য তালিকা হওয়া উচিতঃ

                    • কম কার্বোহাইড্রেট,
                    • বেশি ফাইবার,
                    • পর্যাপ্ত প্রোটিন,
                    • এবং নিয়মিত সময়ে ছোট ছোট পরিমাণে খাবার।

                    এভাবে খেলে রক্তে শর্করা স্থিতিশীল থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা কমে যায়।

                    প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর-(FAQ)

                    প্রশ্ন ১: ডায়াবেটিস রোগী কি ভাত খেতে পারেন?

                    উত্তরঃ পারেন, তবে পরিমাণ কমাতে হবে এবং সাদা চালের বদলে ব্রাউন রাইস বা লাল চাল খাওয়া ভালো।

                    প্রশ্ন ২: চিনি ছাড়া জুস কি খাওয়া যাবে?

                    উত্তরঃ পুরো ফল খাওয়াই নিরাপদ। জুসে ফাইবার থাকে না, তাই দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়।

                    প্রশ্ন ৩: চা বা কফি খাওয়া যাবে কি?

                    উত্তরঃ যাবে, তবে চিনি ছাড়া এবং দিনে ১–২ কাপের বেশি নয়।

                    প্রশ্ন ৪: ডায়াবেটিসে উপবাস থাকা কি বিপজ্জনক?

                    উত্তরঃ হ্যাঁ, দীর্ঘ সময় না খেলে রক্তে শর্করা খুব কমে যেতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে।

                    শেষ কথাঃডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

                    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক চাপমুক্ত জীবনই প্রধান উপায়। একটি সুসম খাদ্য তালিকা শুধু রক্তে শর্করাই নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং শরীরকে শক্তি ও পুষ্টি যোগায়। তাই আজ থেকেই নিজের জন্য সঠিক ডায়াবেটিস খাদ্য তালিকা তৈরি করুন এবং সুস্থ থাকুন।লেখাটি ভালো লাগলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


                    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

                    পরবর্তী পোস্ট দেখুন
                    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
                    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

                    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

                    comment url