ভিটামিন সি এর উপকারিতা | শরীরে ভিটামিন সি এর ভূমিকা, ঘাটতির লক্ষণ ও খাবারের উৎস
ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid) নামেও পরিচিত, একটি অপরিহার্য পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। আমাদের শরীর এটি নিজে তৈরি করতে পারে না, তাই খাবার থেকেই এটি গ্রহণ করতে হয়। ভিটামিন সি আমাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখতে, ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করতে, ক্ষত সারাতে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি এর উপকারিতা | শরীরে ভিটামিন সি এর ভূমিকা, ঘাটতির লক্ষণ ও খাবারের উৎস সম্পর্কে জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভিটামিন সি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বক ও হাড়ের যত্ন, ক্ষত সারানো এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব - ভিটামিন সি এর উপকারিতা, ঘাটতির লক্ষণ, খাবারের উৎস ও প্রতিদিন কতটা প্রয়োজন।
এই আর্টিকেলে যা পড়বেনঃ
- ভিটামিন সি কী?
- ভিটামিন সি এর উপকারিতা
- ভিটামিন সি এর কাজ | শরীরে ভিটামিন সি এর প্রধান ভূমিকা
- ভিটামিন সি এর ঘাটতির লক্ষণ | শরীরে ভিটামিন সি কমে গেলে যা ঘটে
- ভিটামিন সি এর উৎস | কোন খাবারে ভিটামিন সি বেশি থাকে
- দৈনিক ভিটামিন সি প্রয়োজন
- ভিটামিন সি অতিরিক্ত গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- কখন ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট দরকার হতে পারে?
- ভিটামিন সি সংরক্ষণে কিছু টিপস
- শেষকথাঃ ভিটামিন সি এর উপকারিতা
ভিটামিন সি কী?
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যাল বা ক্ষতিকর পদার্থের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এটি শরীরে কোলাজেন তৈরি, আয়রন শোষণ, এবং টিস্যু গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ হারবাল চা এর উপকারিতা
ভিটামিন সি এর উপকারিতা
১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ভিটামিন সি আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে সর্দি-কাশি বা সংক্রমণ দ্রুত সারতে সাহায্য করে।
২. ক্ষত সারানো ও টিস্যু পুনর্গঠনে সাহায্য করে
ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বক, হাড়, পেশি এবং রক্তনালীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই যাদের ত্বকে ক্ষত, কাটা-ছেঁড়া বা সার্জারির পর ক্ষত থাকে, তাদের জন্য ভিটামিন সি খুব উপকারী।
৩. ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখে
ভিটামিন সি ত্বকের অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে, দাগ-ছোপ হ্রাস করে এবং কোলাজেন তৈরির মাধ্যমে ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে।
অনেক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহৃত হয় ত্বক ফর্সা ও দাগহীন রাখতে।
৪. হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে
ভিটামিন সি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীকে মজবুত করে এবং হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমায়, ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
ভিটামিন সি শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল নামক ক্ষতিকর উপাদানকে নিরপেক্ষ করে, যা কোষের ক্ষতি ঘটিয়ে ক্যানসার বা বার্ধক্য ত্বরান্বিত করতে পারে। ফলে এটি অ্যান্টি-এজিং এবং ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৬. দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখে
ভিটামিন সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি মাড়ির রক্ত চলাচল উন্নত করে ও ইনফ্লেমেশন কমায়। ভিটামিন সি ঘাটতির কারণে স্কার্ভি (Scurvy) নামক রোগ হতে পারে, যা দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে।
৭. আয়রন শোষণে সাহায্য করে
ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে যারা উদ্ভিদভিত্তিক খাবার খান (vegetarian), তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
ভিটামিন সি চোখের রেটিনা ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটি ক্যাটারাক্ট ও এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজিজ থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিক কমানোর ঘরোয়া উপায়
ভিটামিন সি এর কাজ | শরীরে ভিটামিন সি এর প্রধান ভূমিকা
ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid) নামে পরিচিত, শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি শুধু রোগ প্রতিরোধেই নয়, বরং ত্বক, হাড়, দাঁত, রক্তনালী ও কোষের সুরক্ষায় বহুমুখী ভূমিকা পালন করে।
নিচে ভিটামিন সি এর কাজগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো ঃ
১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
- ভিটামিন সি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Cells) উৎপাদনে সহায়তা করে, যা জীবাণু, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে সর্দি-কাশি, সংক্রমণ বা সাধারণ ঠান্ডা দ্রুত সারতে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
- ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
- ফ্রি র্যাডিক্যাল হলো এমন ক্ষতিকর অণু যা কোষের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- তাই ভিটামিন সি বার্ধক্য প্রতিরোধ, ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখা এবং কোষের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. ত্বক সুন্দর ও টানটান রাখে
- ভিটামিন সি কোলাজেন (Collagen) তৈরিতে সাহায্য করে, যা ত্বকের টানটান ভাব ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে।এর ফলে ত্বক থাকে মসৃণ, দাগহীন ও উজ্জ্বল।
- এজন্য অনেক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি ফ্রেকলস, ব্ল্যাক স্পট ও সূক্ষ্ম রেখা হ্রাসে কার্যকর।
৪. ক্ষত সারাতে সহায়তা করে
- শরীরের কোনো জায়গায় কাটা-ছেঁড়া, দগ্ধ হওয়া বা সার্জারি হলে ভিটামিন সি টিস্যু পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
- এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে।
৫. হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা
- ভিটামিন সি রক্তনালীকে মজবুত করে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- এটি রক্তচাপ হ্রাসে সহায়তা করে, ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়
৬. দাঁত ও মাড়ির যত্নে ভূমিকা
- ভিটামিন সি মাড়ির রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ কমায়।
- এর ঘাটতির কারণে স্কার্ভি (Scurvy) নামক রোগ হয়, যা মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া ও রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
৭. আয়রন শোষণে সাহায্য করে
- ভিটামিন সি খাবার থেকে প্রাপ্ত নন-হিম আয়রন (Non-heme iron) শোষণে সহায়তা করে।
- এর ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ হয়।
৮. হাড় ও টিস্যুর গঠন মজবুত করে
- ভিটামিন সি হাড়, তরুণাস্থি (cartilage), ও টিস্যুর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, ফলে হাড় ভাঙা বা জয়েন্ট পেইনের ঝুঁকি কমে যায়।
৯. চোখের দৃষ্টি রক্ষা করে
- ভিটামিন সি চোখের রেটিনা ও লেন্সকে সুরক্ষা দেয়।
- এটি ক্যাটারাক্ট ও বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া (Macular Degeneration) প্রতিরোধে সহায়ক।
১০. মানসিক ও স্নায়ুবিক স্বাস্থ্যে ভূমিকা
- ভিটামিন সি সেরোটোনিন (Serotonin) হরমোনের উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, যা মানসিক প্রশান্তি ও মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- এর ঘাটতি হলে অবসাদ বা ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১১. কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
- ভিটামিন সি শরীরে এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- এটি রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে, ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
ভিটামিন সি এর ঘাটতির লক্ষণ | শরীরে ভিটামিন সি কমে গেলে যা ঘটে
ভিটামিন সি শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্ষত সারানো, ত্বক ও হাড়ের যত্নসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু অনেক সময় খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ না করলে শরীরে ঘাটতি দেখা দেয়, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিচে পয়েন্ট আকারে ভিটামিন সি এর ঘাটতির প্রধান লক্ষণ ও তার বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
ভিটামিন সি এর ঘাটতির লক্ষণ (Symptoms of Vitamin C Deficiency)
১. ক্ষত সারতে দেরি হওয়া (Slow Wound Healing)
- ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা ক্ষত সারানোর জন্য অপরিহার্য।
- শরীরে ভিটামিন সি কম থাকলে কাটা-ছেঁড়া, ফোঁড়া বা সার্জারির ক্ষত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দেরিতে শুকায়।
২. দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ও মুখে ঘা (Bleeding Gums & Mouth Ulcers)
- ভিটামিন সি এর অভাবে দাঁতের মাড়ি দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজে রক্ত পড়ে।
- এটি স্কার্ভি (Scurvy) নামক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
- এছাড়া মুখে ছোট ছোট ঘা বা ঘা সারতে দেরি হওয়াও ভিটামিন সি ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
৩. ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে যাওয়া (Dry and Rough Skin)
- ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে।
- যখন শরীরে ভিটামিন সি কমে যায়, তখন ত্বক তার প্রাকৃতিক কোমলতা হারায়, শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে এবং দাগ-ছোপ দেখা দেয়।
৪. চুল দুর্বল হয়ে পড়া (Weak or Falling Hair)
- ভিটামিন সি চুলের গোড়া শক্ত রাখে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- এর ঘাটতি হলে চুল ভেঙে যায়, পাতলা হয়ে পড়ে বা অল্প বয়সেই পড়তে শুরু করে।
৫. সহজে ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভব করা (Fatigue & Weakness)
- ভিটামিন সি শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এবং শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
- এর অভাবে শরীরে আয়রন ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে মানুষ সবসময় দুর্বলতা, মাথা ঘোরা বা অবসাদ বোধ করে।
৬. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া (Low Immunity)
- ভিটামিন সি আমাদের ইমিউন সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- এর অভাবে শরীর সহজেই ঠান্ডা, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হয় এবং সুস্থ হতে সময় নেয়।
৭. চোখের নিচে ফোলাভাব ও ফ্যাকাশে ভাব (Pale Skin & Puffy Eyes)
- ভিটামিন সি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
- ঘাটতির কারণে ত্বকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, ফলে চোখের নিচে ফোলাভাব ও মুখে ফ্যাকাশে ভাব দেখা দেয়।
৮. হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা (Bone & Joint Pain)
- ভিটামিন সি হাড় ও কার্টিলেজের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- এর ঘাটতির ফলে জয়েন্টে ব্যথা, অস্থি দুর্বলতা ও সহজে ভাঙার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
৯. ক্ষুধামন্দা ও হজমের সমস্যা (Loss of Appetite)
- ভিটামিন সি এর অভাবে হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়।
- এর ফলে ক্ষুধা কমে যায়, পেটে ভারী ভাব বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
১০. মানসিক অবসাদ ও মনোযোগের ঘাটতি (Mood Changes)
- গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সি সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদনে ভূমিকা রাখে যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- এর অভাবে বিষণ্ণতা, রাগ বা মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
১১. স্কার্ভি (Scurvy): ভিটামিন সি ঘাটতির চরম অবস্থা
যদি শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে ভিটামিন সি না পাওয়া যায়, তাহলে স্কার্ভি নামক মারাত্মক রোগ হতে পারে।
এর লক্ষণসমূহ হলোঃ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া ও রক্ত পড়া
- শরীরে কালো দাগ ও ক্ষত
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- চুল ভেঙে যাওয়া
- দাঁত নড়ে যাওয়া বা পড়ে যাওয়া
ভিটামিন সি এর অভাবে শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, যেমনঃ
- সহজে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- ক্ষত সারতে দেরি হওয়া
- দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- ত্বকে রুক্ষতা ও শুষ্কতা
- চুল পড়া
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস
- ক্ষুধামন্দা ও অবসাদ
ভিটামিন সি এর উৎস | কোন খাবারে ভিটামিন সি বেশি থাকে
ভিটামিন সি এর প্রাকৃতিক উৎস হলো বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি যেমন লেবু, পেয়ারা, আমলকি, কমলালেবু, কিউই ও ব্রোকলি। জানুন ভিটামিন সি এর উৎস, উপকারিতা ও প্রতিদিন কতটুকু প্রয়োজন।
ভিটামিন সি এর উৎস (Vitamin C Rich Foods in Bangla)
নিচে ফল, সবজি ও অন্যান্য খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন সি এর প্রাকৃতিক উৎসগুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ
১. আমলকি (Indian Gooseberry / Amla)
- আমলকি ভিটামিন সি এর সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎসগুলোর একটি।
- মাত্র ১০০ গ্রাম আমলকিতে প্রায় ৪৫০–৬০০ mg ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের দৈনিক চাহিদার অনেক গুণ বেশি।
- এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখে এবং ত্বক, চুল ও চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
২. পেয়ারা (Guava)
- পেয়ারা ভিটামিন সি এর দারুণ উৎস।
- প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে প্রায় ২২৮ mg ভিটামিন সি থাকে।
- নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তে কোলেস্টেরল কমে, ত্বক উজ্জ্বল থাকে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. লেবু ও কমলালেবু (Lemon & Orange)
- লেবু, কমলালেবু, মাল্টা ও কাগজি লেবু — এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।
- প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৫০–৫৫ mg ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
- সকালে এক গ্লাস লেবু পানি পান করলে শরীরে ভিটামিন সি সরবরাহ হয় এবং হজম শক্তি বাড়ে।
৪. কাঁচা মরিচ (Green Chili)
- হ্যাঁ, কাঁচা মরিচ শুধু ঝাল নয় — এটি ভিটামিন সি এরও দারুণ উৎস!
- প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচে প্রায় ১৪৩ mg ভিটামিন সি থাকে।
- এটি শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধে ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় সহায়ক।
৫. ব্রোকলি (Broccoli)
- সবুজ সবজির মধ্যে ব্রোকলি অন্যতম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার।
- ১০০ গ্রাম ব্রোকলিতে প্রায় ৮৯ mg ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
- এটি হৃদযন্ত্র ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৬. স্ট্রবেরি (Strawberry)
- মিষ্টি ও পুষ্টিকর এই ফলে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৫৯ mg ভিটামিন সি থাকে।
- স্ট্রবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও তরুণ রাখে।
৭. কিউই (Kiwi)
- কিউই ফলেও প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে — প্রায় ৯২ mg প্রতি ১০০ গ্রাম।
- এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৮. টমেটো (Tomato)
- টমেটো শুধু ভিটামিন এ নয়, ভিটামিন সি এরও ভালো উৎস।
- প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৩ mg ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
- এটি হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী এবং ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করে।
৯. পালং শাক (Spinach)
- সবুজ পাতার শাকগুলোর মধ্যে পালং শাকে ভিটামিন সি এর পরিমাণও উল্লেখযোগ্য।
- ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ২৮ mg ভিটামিন সি থাকে।
- এটি আয়রন শোষণে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে।
১০. তরমুজ ও পেঁপে (Watermelon & Papaya)
- এই দুটি ফলও ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস।
- পেঁপেতে প্রায় ৬০ mg এবং তরমুজে প্রায় ৮ mg ভিটামিন সি থাকে।
- পেঁপে হজমে সহায়ক এবং ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
টেবিলে সংক্ষেপে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
ক্র. নং | খাবারের নাম | প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন সি (mg) |
---|---|---|
১ | আমলকি | 450–600 |
২ | পেয়ারা | 228 |
৩ | কাঁচা মরিচ | 143 |
৪ | কিউই | 92 |
৫ | ব্রোকলি | 89 |
৬ | স্ট্রবেরি | 59 |
৭ | কমলালেবু / লেবু | 53 |
৮ | টমেটো | 23 |
৯ | পালং শাক | 28 |
১০ | পেঁপে | 60 |
দৈনিক ভিটামিন সি প্রয়োজন
ক্র.নং | বয়স/গোষ্ঠী | দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (মি.গ্রা.) |
---|---|---|
১ | প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ | 90 mg |
২ | প্রাপ্তবয়স্ক নারী | 75 mg |
৩ | গর্ভবতী নারী | 85 mg |
৪ | স্তন্যদানকারী নারী | 120 mg |
৫ | শিশু (১–৮ বছর) | 15–25 mg |
ধূমপায়ীদের জন্য এই চাহিদা অতিরিক্ত 35 mg পর্যন্ত হতে পারে, কারণ ধূমপান শরীরে ভিটামিন সি কমিয়ে দেয়।
ভিটামিন সি অতিরিক্ত গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় এবং অতিরিক্ত অংশ প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়, তবুও অতিরিক্ত মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমনঃ
- পেট ব্যথা
- ডায়রিয়া
- বমি ভাব
- কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি
কখন ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট দরকার হতে পারে?
যদি কেউ নিয়মিত ফলমূল বা শাকসবজি না খান, ধূমপান করেন, বা সংক্রমণজনিত রোগে ভুগছেন — তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভিটামিন সি সংরক্ষণে কিছু টিপস
- ভিটামিন সি তাপ ও আলোতে নষ্ট হয়ে যায়, তাই ফল ও সবজি বেশি সিদ্ধ না করা ভালো।
- কাঁচা অবস্থায় খাওয়াই সবচেয়ে কার্যকর।
- কাটার পর বেশি সময় রেখে দিলে ভিটামিন সি নষ্ট হতে পারে।
শেষকথাঃ ভিটামিন সি এর উপকারিতা
ভিটামিন সি একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক সুন্দর রাখে, ক্ষত সারায় এবং হৃদরোগ ও অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিনের খাবারে লেবু, পেয়ারা, আমলকি, কাঁচা মরিচ, কমলালেবু ইত্যাদি যুক্ত করলে সহজেই ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করা যায়। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url