গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয়
গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মায়ের শরীরের পাশাপাশি ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও মানসিক বিকাশও নির্ভর করে মায়ের সঠিক খাবারের উপর। অনেকেই জানতে চান, গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয়? আসলে, সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শিশুর মেধা বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে।একজন মা গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খেলে বাচ্চা মেধাবী হয় তা জানতে হলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
গর্ভাবস্থায় সঠিক খাবার মায়ের ও শিশুর মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জানুন কোন খাবার খেলে বাচ্চা হবে সুস্থ ও মেধাবী। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পেজসূচীঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয় জানতে পড়ুন
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয়
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত নয়
- গর্ভাবস্থায় কিকি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
- শেষকথা
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয়
গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা, বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া,
গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করতে পারে এবং এর ফলে শিশু মেধাবী হতে
পারে। প্রোটিন, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, আয়োডিন এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ
খাবার খাওয়া এক্ষেত্রে সহায়ক। আর যেসব খাবারে এই উপাদানগুলো পাওয়া যায় সেগুলো
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আপনার গর্ভধারণের শুরু থেকেই যেসব ভিটামিন ও খনিজ খাদ্য উপাদান প্রয়োজন সেগুলো
তুলে ধরা হলোঃ
ক্যালসিয়ামঃ আপনার গর্ভের সন্তানের হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম
গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রতিদিন ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে।
দই, দুধ, পনির, পাতাযুক্ত গাঢ় সবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
আয়রনঃ আয়রন আপনার শরীরের লোহিত রক্ত কণিকাকে গর্ভে
বাড়তে থাকা সন্তানকে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করবে।প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন
গ্রহণের চেষ্টা করুন। পাবেন চর্বিহীন মাংস (রেড মিট), পোল্ট্রি মুরগি মটরশুঁটি
ও সিমে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে।
আয়োডিনঃ আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশের জন্য প্রতিদিন ২২০
মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন প্রয়োজন। ডেইরি পণ্য, সামুদ্রিক খাবার, মাংস ও ডিম
আয়োডিনের প্রধান উৎস।
ভিটামিন-এঃ ভিটামিন-এ আপনার সন্তানের হাড়ের বেড়ে ওঠা,
দৃষ্টিশক্তি তৈরি ও ত্বকের বিকাশের জন্য প্রয়োজন। প্রতিদিন আপনাকে ৭৭০
মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ গ্রহণ করতে হবে। গাজর, মিষ্টি আলু এবং সবুজ পাতাওয়ালা
শাকসবজি এগুলোর সবকিছুতেই ভিটামিন-এ থাকে।
ভিটামিন-সিঃ গর্ভের সন্তানের মাড়ি, দাঁত ও হাড়ের বিকাশের জন্য
প্রতিদিন আপনার ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ করতে হবে। লেবু, কমলা,
জাম্বুরার মতো বিভিন্ন সাইট্রাস ফল, ব্রোকলি, টমেটো ও স্ট্রবেরিতে ভিটামিন ‘সি’
থাকে।
ভিটামিন-ডিঃ ভিটামিন ‘ডি’ আপনার শিশুর হাড় ও দাঁত গঠন এবং ভালো
দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের বিকাশে সহায়তা করবে।সূর্যের আলো, ফোরটিফাইড মিল্ক
(এক্সট্রা ভিটামিন ও খনিজ যুক্ত দুধ), স্যামন ও সার্ডিনের মতো চর্বিসমৃদ্ধ মাছ
এগুলো আপনাকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রায়৬০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ভিটামিন
‘ডি’ পেতে সহায়তা করবে।
ভিটামিন-বি৬ঃ ভিটামিন ‘বি৬’ আপনার শিশুর লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়তা
করবে। প্রতিদিন আপনাকে ১.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘বি৬’ গ্রহণ করতে হবে। গরুর মাংস,
হোল গ্রেইন সিরিল ও কলা ভিটামিন ‘বি৬’ এর ভালো উৎস।
ভিটামিন-বি১২ঃ আপনার গর্ভের সন্তানের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ এবং
লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে ভিটামিন ‘বি১২’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিদিন আপনাকে ২.৬ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘বি১২’ গ্রহণ করতে হবে।মাছ, মাংস,
পোল্ট্রি ও দুধ ভিটামিন ‘বি১২’ এর উৎস।
ফলিক এসিডঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফলিক এসিড বিশেষভাবে
গুরুত্বপূর্ণ। এই বি ভিটামিন শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটি এড়াতে
বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং এটা ভ্রুণ ও প্ল্যাসেন্টার বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
বাদাম, গাঢ় সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজি, শিম ও কমলা লেবুর রস প্রতিদিনের প্রয়োজনীয়
৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড পেতে সহায়তা করবে।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার গায়ের রঙ ফর্সা হবে কি না, তা মূলত নির্ভর করে জিনগত
(genetic) বৈশিষ্ট্যের উপর, যা বাবা-মায়ের কাছ থেকে আসে। গর্ভাবস্থায় সঠিক
পুষ্টি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি শিশুর ত্বকের রঙের উপর সরাসরি প্রভাব
ফেলে না।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় যে, যদি ফর্সা বাচ্চা চান তাহলে
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিনমাসে ডিমের সাদা অংশ গ্রহণ করা উচিৎ। তবে সত্য এই যে
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডিম খাওয়া মায়ের জন্য খুব জরুরি।
এছাড়াও আরো কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে এই খাবারগুলো খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
বলে শোনা যায় যেমনঃদুধ, নারকেল, বা জাফরান মেশানো দুধ ইত্যাদি খাওয়ার কথা বলা
হয়। তবে এইসব খাবারের কোনো সরাসরি প্রভাব বাচ্চার গায়ের রঙের ওপর পড়ে না। এই
খাবারগুলো পুষ্টিকর এবং মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু বাচ্চার
গায়ের রঙ নির্ধারণে এদের কোনো ভূমিকা নেই।
অতএব, গর্ভাবস্থায় এমন কোনো খাবার নেই যা খেলে নিশ্চিতভাবে বাচ্চা ফর্সা হবে।
মায়ের উচিত নিজের এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা এবং ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী চলা। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সুস্থ জীবনযাপন
একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে সহায়ক। বাচ্চার গায়ের রঙ যাই হোক না
কেন, সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম নেয়াটাই বড় কথা এবং সেটাই স্বাভাবিক ও সুন্দর।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর। সাধারণভাবে, আপেল, কলা,
পেয়ারা, কমলা, আঙ্গুর, আম, পেঁপে, স্ট্রবেরি, এবং অন্যান্য রসালো ফল
গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ। তবে, কিছু ফল যেমন কাঁচা পেঁপে, আনারস, এবং কিছু
ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর ও লিচু এড়িয়ে চলাই ভালো।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার উপকারিতাঃ
- ফলগুলিতে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
- ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল যেমন আপেল, শিশুর হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত নয়
গর্ভাবস্থায় কিছু ফল খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত, কারণ সেগুলি অনাগত সন্তানের
জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সাধারণত, কাঁচা পেঁপে, আনারস এবং তেঁতুল গর্ভাবস্থায়
এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, অতিরিক্ত পরিমাণে কিছু ফল খাওয়াও উচিত
নয়, যেমনঃ কাঁচা বা আধা-পাকা পেঁপে, যা ল্যাটেক্স ধারণ করে যা অকাল প্রসবের
কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় যে ফলগুলি সাধারণত এড়িয়ে চলতে বলা হয়ঃ
কাঁচা পেঁপেঃএতে ল্যাটেক্স থাকে যা জরায়ুকে সংকুচিত করতে পারে এবং অকাল
প্রসবের কারণ হতে পারে।
আনারসঃকিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে আনারস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে
গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
তেঁতুলঃ অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায়
সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আঙ্গুরঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত পরিমাণে আঙ্গুর
শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে এবং গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে
পারে।
গর্ভাবস্থায় কিকি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয় এটা জানার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া উচিৎ নয় সেটাও জানা জরুরী।গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার আছে যা খাওয়া উচিত নয়, কারণ সেগুলি মা এবং গর্ভস্থ
শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই খাবারগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
কাঁচা বা অর্ধ-সিদ্ধ মাংসঃ সসেজ, সালামি, এবং পেপারোনির মতো
প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না করা হয়নি এমন মাংস খাওয়া
উচিত নয়, কারণ এগুলিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
কিছু নির্দিষ্ট মাছঃ কিছু মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে, যা
গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। হাঙ্গর, সোর্ডফিশ, কিং
ম্যাকেরেল এবং টাইলফিশ এড়িয়ে চলা উচিত।
কাঁচা ডিমঃ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা
খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
পাস্তুরিত না করা দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারঃ যেমন নরম পনির এড়িয়ে
চলতে হবে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইনঃ গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ
করা উচিত নয়, যেমন কফি, চা, এবং কিছু কোমল পানীয়।
অ্যালকোহলঃ গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল সেবন সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা
উচিত।
অস্বাস্থ্যকর খাবারঃ ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং বেশি
চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ এ সমস্ত খাবার বেশিরভাগ সময়ই
অস্বাস্থ্যকর হয়।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারঃ যেকোনো ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়া
উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলা
মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেষকথাঃ
সাধারণত মায়ের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ২৫% Brain Development ঘটে। গর্ভাবস্থায় সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস মায়ের সুস্থতা যেমন নিশ্চিত করে, তেমনি শিশুর মেধাবিকাশ ও মানসিক বিকাশেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। মাছ, ডিম, দুধ, শাকসবজি, ফল, বাদাম, পূর্ণ শস্য ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার মায়ের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান, ভিটামিন-খনিজ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলাই পারে বাচ্চাকে আরও মেধাবী করে তুলতে। আশাকরি গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা মেধাবী হয় পোস্টটি
পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url