মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

 মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় কি 

সুস্থ্য দেহ সুস্থ্য মন এই প্রবাদ আমরা সকলেই জানি। শরীরের অসুস্থ্যতা সহজেই সারানো গেলেও মনের অসুখ সারানো অনেকটাই কঠিন। মনের অসুখ ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়গুলো আমাদের জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়


মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী অভ্যেস গড়ে তুললেই ভালো সুফল পাওয়া যায় নিম্নে তা আলোচনা করা হলো।

পেজ সুচীপত্রঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কার্যকরী উপায় 

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা

প্রতিদিন কমপক্ষে ১০মিনিট শান্তভাবে বসে প্রার্থনা করুন। গভীর ভাবে শ্বাস নিন এবং সাধ্যমত সময় ধরে রেখে আবার ছেড়ে দিন। এভাবে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।এর ফলে মানসিক স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমবে এবং মন ভালো থাকবে।

নিজের অনুভুতি প্রকাশ করা এবং অনুভুতিকে গুরুত্ব দেয়া

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করুন। মনের কষ্ট চেপে না রেখে অন্যের কাছে শেয়ার করুন। মন খারাপ লাগলে বলুন-মন ভালো নেই। নিতান্তই কারো কাছে বলতে না পারলে ডায়রীতে লিখে রাখুন। এতে মন হালকা হবে এবং কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা, দৌড়ানো, শারীরিক ব্যায়াম করলে এন্ডরফিন নামক এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে মানসিক চাপ ও হতাশা কমে এবং মন ভালো থাকে।

পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো। সঠিক ঘুম না হলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, বিষন্নতা বাড়ে,অবসাদ ঘিরে ধরে আর মন মেজাজ ও ভালো থাকেনা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা নিয়মিত ঘুমানো প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। পুষ্টিকর খাবার যেমন-ফলমুল, দুধ, বাদাম, সব্জি ইত্যাদি মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া বেশী বেশী পানি পান করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৪লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।

    অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার সর্বদা পরিহার করা উতিৎ। ধুমপান, এলকোহল কখনো মন ভালো রাখার স্থায়ী কারণ হতে পারেনা। এছাড়া অতিরিক্ত জাঙ্কফুড মনের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

সম্পর্ক রক্ষা করা 

মানসিক চাপে থাকলে আমরা অনেক সময় নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের এড়িয়ে চলি। এতে নিজের কষ্ট শেয়ার করার জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়। বরং নিজের সমস্যাগুলো পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়দের সাথে শেয়ার করলে মন হালকা হয়। তাদের পরামর্শ অনেক সময় বিপদ থেকে উদ্ধার হতে সহায়তা করে। একাকীত্ব মানসিক স্বাস্থ্যকে আরো খারাপ করে। নিজের সমস্যাগুলো নির্দ্ধিধায় কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করুন।

ডিজিটাল বিরতী নেয়া 

ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে তেমনি এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়মিত ব্যবহার করলে আমাদের মনের মধ্যে হিংসা, ক্রোধ, কমপেয়ার তৈরী হয়। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এর থেকে পরিত্রানের জন্য ডিজিটাল বিরতী নেয়া অত্যন্ত জরুরী। নিম্নোক্তভাবে ডিজিটাল বিরতী নেয়া যেতে পারে-

নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণঃ 

সব সময় সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে চোখের উপর চাপ পড়ে, ঘুম কম হয়,মানসিক বিষন্নতা বাড়ে। দিনের কিছুটা সময় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করার অভ্যেস করুন। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ডিভাইস ফ্রি ‍জোন তৈরীঃ

আপনার বাসার কয়েকটি জায়গা যেমন-বেডরুম, ডাইনিং রুম ডিভাইস ফ্রি করুন। অর্থাৎ এই জায়গাগুলোতে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকার অভ্যেস গড়ে তুলুন।

সোস্যাল মিডিয়া বিরতীঃ

সপ্তাহের ১-২দিন সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, দেখুন মন ভালো লাগবে। এসময় বই পড়া, ছবি আাঁকা, গল্পকরা ইত্যাদি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

নিজের পছন্দের কাজ করা

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিজের পছন্দের কাজে মনযোগী হোন। আপনি নিজে যে কাজটি করতে পছন্দ করেন, তা সময় নিয়ে করুন। অনেকে ভ্রমন করতে ভালোবাসেন। একই জায়গায় কাজ করতে করতে অনেকে বোরিং হয়ে যান, তাই সময় নিয়ে জায়গা বদলের জন্য অন্যত্র ভ্রমণ করুন। নতুন পরিবেশে ভালো লাগার বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন।


পেশাদারের সাহায্য নেয়া

যদি দীর্ঘদিন ধরে দুশ্চিন্তা করতে থাকেন তাহলে আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে যাবেন। প্রয়োজনে সাইকোলজিস্ট অথবা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। তারা আপনাকে সুন্দর পরামর্শ দিবেন। 

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় শেষ কথাঃ
    আপনি এই পোস্টে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার অনেকগুলো বিষয় সম্বন্ধে ধারণা পেয়েছেন। সর্বোপরি নিজেকে ভালো রাখতে শারীরিকভাবে ও সুস্থ্য থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। শারীরিক অসুস্থ্যতা ও অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। তাই নিজে সুস্থ্য থাকুন, অন্যকে সুস্থ্য থাকার পরামর্শ দিন। এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url